জুন ২২, ২০২০
পুত্র ও পুত্রবধূর নির্যাতনে বাড়ি ছাড়া খলিষখালীর বারানগরের বৃদ্ধা শান্তিলতা
খায়রুল আলম সবুজ, খলিষখালী (পাটকেলঘাটা) প্রতিনিধি : পাটকেলঘাটার খলিষখালী ইউনিয়নের বারানগর গ্রামের মৃত কমল চক্রবর্তীর স্ত্রী শান্তিলতা চক্রবর্তী (৬৫) দীর্ঘদিন পুত্র ও পুত্রবধূর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা যায় নির্যাতিত শান্তিলতা চক্রবর্তীর পুত্র হারান চক্রবর্তী ও পুত্রবধূ সেবানী চক্রবর্তীর হাতে নির্যাতিত হয়ে মনের কষ্টে বাড়ি ছেড়ে বর্তমানে তার ছোট মেয়ে বৃত্তিকা চক্রবর্তীর শ্বশুর বাড়ি কলারোয়া উপজেলা জয়নগর গ্রামে থাকছেন। এ বিষয়ে শান্তিলতা চক্রবর্তীর সাথে ফোনে কথা বলতে চাইলে তিনি কানে শুনতে পান না বলে কথা বলা সম্ভব হয়নি। পরে শান্তিলতা চক্রবর্তীর ছোট মেয়ে বৃত্তিকা চক্রবর্তীর স্বামী তারক চক্রবর্তী বলেন, আমার শ্বশুর মৃত কমল চক্রবর্তী মারা যাওয়ার পর থেকে আমার শ্যালক হারান চক্রবর্তী ও তার স্ত্রী সেবানী চক্রবর্তী আমার শাশুড়িকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে আসছে। আমার শ্বশুর প্রায় ২০-৩০ বিঘা জমি রেখে গেছে। দলুয়া বাজারে একটা দোকানও আছে। অথচ আমার শাশুড়ি নির্যাতিত। আমার শাশুড়ি কানে শুনতে পায় না। প্রতিনিয়ত আমার শাশুড়িকে মারধর করে আমার শালা বউ সেবানী চক্রবর্তী। কিন্তু আমার শ্যালক তার প্রতিবাদ না করে বরং আমার শাশুড়িকে নির্যাতনের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেয়। এমন কি আমার শ্যালকের বউ তার শাশুড়ির গায়ে হাত তুলতে পিছপা হয় না। অবশেষে বউমা ও ছেলের জালা যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে আমার শাশুড়ি আমার বাড়িতে ক্ষোভে দুঃখে চলে আসে এখান থেকে চার মাস আগে। পরে হারান চক্রবর্তীর ছেলে এসে আমার মাকে নিয়ে যায়। তারপরেও আমার শাশুড়ির নির্যাতন কমেনি। আবার শুরু হয় ছেলে ও বউমার প্রতিনিয়ত নির্যাতন। আবার মারধর শুরু করে আমার শাশুড়িকে। ঠিক মত খেতেও দেয় না । আমার শাশুড়ি জালা যন্ত্রণা ভোগ করতে না পেরে আবার স্বামীর বাড়ি ত্যাগ করে সেই বারানগর গ্রাম থেকে জয়নগর আমার বাড়িতে পায়ে হেঁটে চলে আসে প্রায় ১ মাস ১০ দিন আগে। ২০০ টাকা ছিল শাশুড়ির কাছে সেটাও নাকি শ্যালক কেড়ে নিয়েছিল। তিনি আরো বলেন, আমার শাশুড়ি আমার বাড়িতে আসার পরে আমার কুটুম নিতে আসা তো পড়ে মরুক একবার ফোন দিয়েও শোনেনি। আমি খলিষখালী ইউপি চেয়ারম্যান মোজাফফর রহমানের কাছেও তিন, চার বার ফোন দিলেও তার কোন ব্যবস্থা এখনও হয়নি। এমনকি জয়নগর ইউপি চেয়ারম্যান ছামসুদ্দিন আল মাসুদও এক মাস আগে খলিষখালী ইউপি চেয়ারম্যান এর কাছে ফোন দিয়েছিল তাও কোন ব্যবস্থা হল না। এমন কি বারানগর ইউপি সদস্য তপন মেম্বারের কাছেও বিষয়টি বলেছি। এরপর ওই গ্রামের স্থানীয় দলুয়া বাজারের মৎস্য ব্যবসায়ী নারান মন্ডলকে জানিয়েছি। কিন্তু কেউ কোন ব্যবস্থা আজও করতে পারল না। এ ব্যাপারে সরেজমিনে, রবিবার (২১ জুন) শান্তিলতা চক্রবর্তীর স্বামীর বাড়ি খোঁজ খবর নিতে গেলে তার ছেলে হারান চক্রবর্তীকে পাওয়া যায়নি পরে তার স্ত্রী সেবানী চক্রবর্তীকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আমার ননদের স্বামী যা বলছে সব মিথ্যা কথা। আমি আমার শাশুড়িকে খুব যতœ করি। উনার কিছু হলেই উনি রাগ করে বাড়ি ছেলে চলে যান। এক জায়গায় থাকতে গেলে তো সামান্য ত্রæটি-বিচ্যুতি হতে পারে। পরে তার কাছে মারধরের কথা শুনলে তিনি বলেন, সব মিথ্যা কথা আমি আমার শাশুড়িকে কখনো মারধর করি না বরং উনি আমাকে মারধর করে। শাশুড়িকে আনতে যাননি কেন বা মোবাইল করেননি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা উনার ছেলে ভাল জানেন। এরপর রবিবার রাতে শান্তিলতা চক্রবর্তীর ছেলে হারান চক্রবর্তী মোবাইল ফোনে জানান, আমার মা দীর্ঘদিন এমন কিছু হলেই ব্যাগ গুছিয়ে চলে যান। আমার বাবা থাকা কালীনও এমন করত। তার মাথার সমস্যা আছে মনে হয়। তার মাকে আনতে যায়নি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার মাকে আমি জীবনেও আনতে যাব না এমনকি ফোনও করব না। যদি নিজে থেকে বাড়িতে আসে আসুক। বাড়ি আসলে আলাদা বাজার করে ও রান্না করে খেতে হবে তাকে। খলিষখালী ইউপি চেয়ারম্যান সাংবাদিক মোজাফফর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমি অনেক আগে শুনেছি। বিষয়টি খুবই অমানবিক। আমি শান্তিলতা চক্রবর্তীর ছেলে হারান চক্রবর্তীকে অনেকদিন ধরে আমার পরিষদে আসতে বলছি কিন্তু সে আসে না। আমি আমার পরিষদের গ্রাম্য পুলিশকেও তার বাড়িতে পাঠিয়েছি বিষয়টা মীমাংসা করার জন্য। কিন্তু তার পরেও সে আসেনি। আমি অতি দ্রæত এ সমস্যার সমাধান করে দেব। আমার এলাকায় এ ধরনের অপরাধ করে কেউ পার পাবে না। 8,573,981 total views, 1,751 views today |
|
|
|